সুন্দরবন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখন্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ[১]। অববাহিকার সমুদ্রমূখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত । ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার[২] রয়েছে বাংলাদেশে[৩]। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ একই নিরবচ্ছিন্ন
ভূমিরূপের অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের সূচিতে ভিন্ন ভিন্ন নামে
সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় পার্ক নামে।
সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং
ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ,
অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে
জলের এলাকা।[২] বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ৫০০ বাঘ ও ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
নামকরণ
বাংলায় "সুন্দরবন"-এর আক্ষরিক অর্থ "সুন্দর জঙ্গল" বা "সুন্দর বনভূমি"। সুন্দরী গাছ
থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়।
অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে
"সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে
সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে[১]।
ইতিহাস
মুঘল আমলে
(১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ঐতিহাসিক আইনী
পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্ক্ষিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে
বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক
তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ
ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে। ১৮২৮
সালে বৃটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধীকার অর্জন করে। এল. টি হজেয ১৮২৯
সালে সুন্দরবনের প্রথম জরীপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন
এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং ১৮৭৯ সালে সমগ্র
সুন্দরবনের দায় দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয়। সুন্দরবনের প্রথম
বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নাম M. U. Green। তিনি ১৮৮৪ সালে সুন্দরবনের
বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময়
সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে। যা বাংলাদেশের
আয়তনের প্রায় ৪.২% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪%।
সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫
সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত
বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি
অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা
প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে
১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত
হয়, যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণিত হয়[৪][৫]।
১৯১১
সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যা
না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর আধীনে এসেছে। তখন হুগলী নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর
মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা
নির্ধারিত হয়। একই সাথে চব্বিশ পরগনা , খুলনা ও বাকেরগঞ্জ এই তিনটি জেলা
অনুযায়ী এর আন্তঃসীমা নির্ধারণ করা হয়। জলাধারসহ পুরো এলাকার আয়তন হিসেব
করা হয় ৬,৫২৬ বর্গমাইল (১৬,৯০২ কি.মি)। জলবহুল সুন্দর বন ছিল বাঘ ও
অন্যান্য বন্য জন্তুতে পরিপূর্ণ। ফলে জরিপ করার প্রচেষ্টা খুব একটা সফল হতে
পারেনি। সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে খুব সম্ভবত এর প্রধাণ বিশেষ গাছ
সুন্দরীর (Heritiera fomes) নাম থেকেই। এ থেকে পাওয়া শক্ত কাঠ
নৌকা, আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন জিনিস তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবন সর্বত্রই
নদী, খাল, ও খাঁড়ি দ্বারা বিভক্ত, যাদের মধ্যে কয়েকটি স্টিমার ও স্থানীয়
নৌকা উভয়ের চলাচল উপযোগী নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হত কলকাতা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মধ্যে যোগাযোগের জন্য।
ভৌগোলিক গঠন
হাজার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর বরাবর আন্তঃস্রোতীয় প্রবাহের দরুন
প্রাকৃতিকভাবে উপরিস্রোত থেকে পৃথক হওয়া পলি সঞ্চিত হয়ে গড়ে উঠেছে
সুন্দরবন। এর ভৌগোলিক গঠন ব-দ্বীপীয়, যার উপরিতলে রয়েছে অসংখ্য জলধারা
এবং জলতলে ছড়িয়ে আছে মাটির দেয়াল ও কাদা চর। এতে আরো রয়েছে সমুদ্র
সমতলের গড় উচ্চতার চেয়ে উঁচুতে থাকা প্রান্তীয় তৃণভূমি, বালুতট এবং
দ্বীপ, যেগুলো জুড়ে জালের মত জড়িয়ে আছে খাল, জলতলের মাটির দেয়াল, আদি
ব-দ্বীপীয় কাদা ও সঞ্চিত পলি। সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা
স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার[৬]।
জৈবিক উপাদানগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক বিষয়ের গঠন
প্রক্রিয়া ও প্রাণী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে। সৈকত, মোহনা, স্থায়ী ও
ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, খাঁড়ি, বালিয়াড়ি, মাটির স্তূপের মত
বৈচিত্র্যময় অংশ গঠিত হয়েছে এখানে। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জগৎ নিজেই নতুন
ভূমি গঠনে ভূমিকা রাখে। আবার আন্ত:স্রোতীয় উদ্ভিদ জগৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে জলে অঙ্গসংস্থান প্রক্রিয়ায়। ম্যানগ্রোভ প্রাণীজগৎ-এর উপস্থিতি
আন্তঃস্রোতীয় কাদা চরে ব্যষ্টিক অঙ্গসংস্থানিক পরিবেশ তৈরি করে। এটি
পলিকে ধরে রাখে বীজের জন্য আনুভূমিক উপশিলাস্তর সৃষ্টির জন্য। অনন্ত
বালিয়াড়ির সংগঠন ও বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় প্রচুর পরিমাণে
থাকা xerophytic ও halophytic গাছ দ্বারা। লতা-পাতা, ঘাস ও হোগলা
বালিয়াড়ি ও অসংগঠিত পলিস্তরের গঠনকে স্থিতিশীল করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উপকূল বরাবর সুন্দরবনের গঠন প্রকৃতি বহুমাত্রিক উপাদানসমূহ দ্বারা
প্রভাবিত, যাদের মধ্যে রয়েছে স্রোতের গতি, ব্যষ্টিক ও সমষ্টিক স্রোত চক্র
এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী দীর্ঘ সমুদ্রতটের স্রোত। বিভিন্ন মৌসুমে সমুদ্রতটের
স্রোত যথেস্ট পরিবর্তনশীল। এরা ঘূর্ণীঝড়ের কারণেও পরিবর্তিত হয়।
উঁচু অঞ্চলে সাদুপানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় ম্যানগ্রোভ
আর্দ্রভূমিগুলোর অনেকগুলোতে সাদুপানির প্রাবাহ ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে
উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। একই সাথে নিও-টেকটনিক গতির কারণে বেঙ্গল
বেসিনও পূর্বের দিকে সামান্য ঢালু হয়ে গিয়েছে, যার ফলে সাদু পানির
বৃহত্তর অংশ চলে আসছে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ অংশের
সুন্দরবনে লবণাক্ততার পরিমাণ ভারতীয় অংশের তুলনায় অনেক কম। ১৯৯০ সালের এক
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে , “হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি বা “গ্রিন
হাউস” এর কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিকে
আশঙ্কাজনক করে তুলেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যাদিও, ২০০৭
খ্রিস্টাব্দে -“জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ” শীর্ষক ইউনেস্কোর
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের যে ৪৫
সে.মি. উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে, তা সহ মনুষ্যসৃষ্ট আরও নানাবিধ কারণে
সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধংস হয়ে যেতে পারে (জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আলোচনায়
প্রাকাশিত আন্তঃসরকার পরিষদের মত অনুযায়ী ২১ শতকের মধ্যেই)[[৭]।
উদ্ভিদবৈচিত্র্য
ব-দ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির
বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের
ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। পূর্ববর্তীটির তুলনায় Rhizophoraceae এর গুরুত্ব
কম। উদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ
পানি ও নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের
ভিত্তিতে।
সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া (Sonneratia apetala)
ও অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধাণ বনাঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে
সুন্দরবনে প্রধাণ তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে
পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, সাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার
সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।
অঞ্চল জুড়ে সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধাণ্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল (Xylocarpus granatum) এবং কেওড়া (Sonneratia apetala)। ঘাস ও গুল্মের মধ্যে Poresia coaractata, Myriostachya wightiana, শন (Imperata cylindrical)], নল খাগড়া (Phragmites karka), গোলপাতা (Nypa fruticans)
রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। কেওড়া নতুন তৈরি হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং
এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরী , বিশেষ করে চিত্রা হরিণের (Axis axis)
জন্য । বনভূমির পাশাপাশি সুন্দরবনের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে নোনতা ও
মিঠা পানির জলাধার, আন্তঃস্রোতীয় পলিভূমি, , বালুচর, বালিয়াড়ি,
বেলেমাটিতে উন্মুক্ত তৃণভূমি এবং গাছ ও গুল্মের এলাকা।
প্রাণীবৈচিত্র্য
মানুষখেকো বাঘ
২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ[১৭]।
এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০
জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার
কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা
বান্ধবগড়ে , মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন
ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর
পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর
জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী
বনবিবির প্রার্থণা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে।
সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য বাঘের দেবতার (Dakshin Ray) প্রার্থণা করাও
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে
সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের
জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে।
সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড
পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের
কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।
এসব বাঘ কেন মানুষকে আক্রমণ করে তার কিছু অনুমিত কারণ এরকমঃ
- যেহেতু সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত সেহেতু তুলনামূলকভাবে এখানকার পানি নোনতা। এখানকার অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে বাঘই মিঠাপানি খায়। কেউ কেউ মনে করে পেয়পানির এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ সার্বক্ষণ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের ব্যপকভাবে আগ্রাসী করে তোলে। কৃত্রিম মিঠাপানির হ্রদ তৈরি করে দিয়েও এর কোনো সমাধান হয়নি।
- উঁচু ঢেউয়ের কারণে বাঘের গায়ের গন্ধ মুছে যায় যা প্রকৃতপক্ষে বাঘের বিচরণ এলাকার সীমানা চিহ্ণ হিসেবে কাজ করে। ফলে নিজের এলাকা রক্ষায় বাঘের জন্য উপায় একটাই, আর তা হলো যা কিছু অনুপ্রবেশ করে তা বাঁধা দেয়া।
- অন্য একটি সম্ভাবনা এমন যে আবহাওয়ার কারণে এরা মানুষের মাংসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের এ অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। আর স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া এসব গলিত মৃতদেহ বাঘ খায়।
- আর একটি সম্ভাবনা হলো এরকম যে, নিয়মিত উঁচু-নিচু স্রোতের কারণে marsh-like এবং পিচ্ছিল হয়ে ওঠা এলাকায় বাঘের পশু শিকার করার কঠিন হয়ে যায়। আবার নৌকায় চড়ে সুন্দরবন জুড়ে মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষ বাঘের সহজ শিকার হয়ে ওঠে। এরকমও বিশ্বাস করা হয় যে মানুষ যখন কাজ বন্ধ করে বসে থাকে তখন বাঘ তাকে পশু ভেবে আক্রমণ করে।
- এছাড়াও মনে করা হয় যে আবাসস্থলের বিচ্ছিন্নতার কারণে এই অঞ্চলের বাঘ তাদের শিকার করার বৈশিষ্ট্য বদলে ফেলেছে যা ২০ শতক জুড়ে ঘটেছে। এশিয়ার বাকি অংশে বাঘের মানুষভীতি বাড়লেও সুন্দরবনের বাঘ মানুষকে শিকার বানানো বন্ধ করবে না হয়তো।
মৎস্য সম্পদ
সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া।[২]
আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে
যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ।
এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা
হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর
এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন (২০১০) অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম
সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা
হাঙর প্রায় দেখাই যায় না। ৯ প্রজাতির শাঁকজ বা শাপলাপাতা মাছের অধিকাংশই
এখন (২০১০) সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দেখা যায় না।[২]
কুঁচে কা কামিলা-জাতীয় মাছের পাঁচটি প্রজাতির সাগর কুইচ্চা ও ধানি
কুইচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ। আগের দিনে বাম মাছের মতো দেখতে এই মাছগুলো
স্থানীয় লোকজন খেত না। এখনো খায় না। তবে হাজার হাজার কাঁকড়া মারা জেলে
কুইচ্চা মাছের টুকরো কাঁকড়া ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। শীতকালে
সাগরপারের জঙ্গলি খালে পূর্ণ জোয়ারের প্রায় স্বচ্ছ জলে আর্চার ফিশ বা
তীরন্দাজ মাছ দেখা যেতো। তিতপুঁটি মাছ আকারের এই মাছগুলো জলের এক-দেড় ফুট
ওপরে গাছের পাতা বা ডালে পিঁপড়ে কিংবা মধ্যম আকৃতির বিভিন্ন পতঙ্গ দেখে
পিচকারীর মতো তীব্র জল ছিটিয়ে পোকাটিকে ভিজিয়ে জলে ফেলে খেয়ে নেয়। এই
মাছ পূর্ণবয়সকালে ফুটখানেক লম্বা হয়। এই মাছগুলো আজকাল আর দেখি না।
একসময় জাভা মাছের খুব নাম শোনা যেতো, এরা ৫৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এখন
(২০১০) দেখা পাওয়া ভার। পায়রাতলী বা চিত্রার মতো অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ
আজকাল জেলেদের জালে খুব কম পড়ছে।[২]
সুন্দরবনের সবচেয়ে পরিচিত মাছ পারশে মাছ। ১৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা
এ মাছটি জঙ্গলের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখনো পাওয়া যায়
খুব কম। পারশেরই জাতভাই বাটা ভাঙান। ভাঙান, গুল বাটা, খরুল ভাঙান আজকাল খুব
কম ধরা পড়ে। খরশুলা বা খল্লা অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ; বনের নদী-খালে এদের
তেমন আর দেখতে পাওয়া যায় না।[২]
সুন্দরবনের কাইক্কা বা কাইকশেল মাছ স্বাদু পানির কাইক্কার চেয়ে আকারে
অনেক বড় হয়। এখানকার এই ঠুঁটি কাইকশেল এখন (২০১০) খুব কম ধরা পড়ে। বিশাল
আকৃতির মেদ মাছের দুটি প্রজাতি এখন বিলুপ্তপ্রায়।[২]
মারাত্মক মাছ কান মাগুর-এর পাশের কাঁটায় মারাত্মক বিষ রয়েছে। বড় কান
মাগুর এখনো (২০১০) কিছু পাওয়া গেলেও দাগি কান মাগুর এখন বিলুপ্তপ্রায়।
ট্যাংরা জাতের গুলশা ট্যাংরা, নোনা ট্যাংরা এখনো কিছু পাওয়া গেলেও বিশাল
আকৃতির শিলং মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে এসেছে। কাজলী মাছও সহসা চোখে পড়ে না।
অপূর্ব সুন্দর ভোল মাছ। সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় মাছ কই ভোল এখন ধরা পড়ে
কালেভদ্রে। আগে সুন্দরবনের খালে কুৎসিত দর্শন গনগইন্যা মাছ বড়শিতে ধরা
পড়তো এখন (২০১০) তেমন একটা পাওয়াও যায় না। রেখা মাছ একসময় বেশ দেখা
যেতো, ইদানীং দেখা পাওয়া যায় না।[২]
গুটি দাতিনা এখনো (২০১০) পাওয়া গেলেও লাল দাতিনা একেবারেই বিরল হয়ে
গেছে। সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাঝ ভাটায় অত্যন্ত সুস্বাদু লাক্ষা মাছ
(স্থানী নাম তাড়িয়াল মাছ: Indian Salmon) দারুণ আলোড়ন তুলে ছোট,
মাঝারি পারশে, দাতিনা মাছ তাড়িয়ে বেড়ায়। এরা আকারে প্রায় চার ফুট
লম্বা হয়। এদের মতোই তপসে মাছের (স্থানীয় নাম রামশোষ) আকাল দেখা
দিয়েছে (২০১০)। জেলেরা অন্তত পাঁচ প্রজাতি চেউয়া মাছ ধরে বড় নদীতে। এর
মধ্যে লাল চেউয়া বিপন্ন হয়ে উঠেছে। সুন্দরবন তথা পৃথিবীর সব ক্রান্তীয়
ম্যানগ্রোভ বনের প্রতীক মাছ হলো মেনো মাছ (Mud Skipper), কোথাও ডাহুক মাছ নামেও পরিচিত। বনে এদের পাঁচটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। প্রজাতিভেদে এরা ৯ থেকে ২২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।[২]
বনের বলেশ্বর, কুঙ্গা নদীতে যথেষ্ট ইলিশ ধরা পড়ে। দুই প্রজাতির ইলিশের
মধ্যে চন্দনা ইলিশ কম পাওয়া যায় (২০১০)। ৪ প্রজাতির ফ্যাসা মাছের মধ্যে
রাম ফ্যাসা কম পাওয়া যায় (২০১০)। বৈরাগী মাছের সংখ্যাও কমেছে। সুন্দরবনের
ভেতর পোড়ামহল, আন্ধারমানিক, জোংরা, শুবদি-গুবদি এলাকার মাঝারি আকারের
বিলগুলোতে বর্ষায় পানি আটকে যায়, কোথাও জোয়ারের পানি ঢোকে। এই বিলগুলোর
পানি মিঠা, এখানে মিঠাপানির মাছ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ জিওল মাছ। কই, শিং, মাগুর, দুই প্রজাতির টাকি, শোল ছাড়াও ছোট ট্যাংরা, পুঁটি, খলসে, চ্যালা, দাঁড়কিনা, কুঁচো চিংড়িসহ নানা মাছ পাওয়া যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এসব বিলে লোনা পানি ঢুকছে। এই বিলগুলোর মাছ তাই শেষ হওয়ার দিন গুনছে।[২]
সুন্দরবনে বর্তমানে (২০১০) ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়। ঠেলা জাল,
রকেট জালের ছিদ্র খুব ছোট হওয়ায় চারা মাছ এবং মাছের ডিম মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুন্দরবন এলাকায় জেলে বাড়ায় মৎস্যসম্পদ দ্রুত কমে
যাচ্ছে। তবে বিষ প্রয়োগে মাছ মারায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।[২]
অর্থনীতি
সুন্দরবনের জনসংখ্যা ৪ মিলিয়নের বেশি[১৮] কিন্তু এর বেশির ভাগই স্থায়ী জনসংখ্যা নয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন, ঠিক তেমনি জাতীয়
অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি দেশের বনজ সম্পদের
একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল জোগান দেয়।
এছাড়াও কাঠ, জ্বালানী ও মন্ডের মত প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে
নিয়মিত ব্যাপকভাবে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ,
কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একই সাথে
প্রয়োজনীয় আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী,
ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, শক্তি সম্পদের আধার এবং পর্যটন কেন্দ্র।
মানুষের বসবাস ও অর্থনৈতিক কাজে ব্যাপক ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও এখনো
সুন্দরবনের ৭০ শতাংশের কাছাকাছি পরিমাণ বনভূমি টিকে আছে, ১৯৮৫ সালে এমন মত
জানায় যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন (ও ডি এ)।
১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বনজ সম্পদের স্থিতির পরিমাণ হ্রাস
পেয়েছে প্রধানত দুইটি ম্যানগ্রোভ প্রাজাতির ক্ষেত্রে - সুন্দরী (Heritiera
fomes) এবং গেওয়া। এই হ্রাসের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ
(ফরেস্টাল ১৯৬০ এবং ও ডি এ ১৯৮৫)। তাছাড়া, মাছ ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী
ব্যতীত অন্যান্য বন্যপশু শিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও
সেখানে জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে (এ শতকে উল্লেখযোগ্য হল
কমপক্ষে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ) এবং ফলশ্রুতিতে
বাস্তুসংস্থানের মান হ্রাস পাচ্ছে (আই ইউ সি এন ১৯৯৪)।
বাংলাদেশের অভয়ারণ্য
বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৪,১১০ বর্গ কি.মি.। এর মধ্যে
নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে প্রায় ১,৭০০ বর্গ কি.মি. যাদের প্রশস্ততা কয়েক
মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কি.মি. পর্যন্ত। জালের মত পরস্পর যুক্ত নৌপথের
কারণে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকায় করে যাওয়া যায়।
সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ২টি বনবিভাগ, ৪টি প্রশাসনিক
রেঞ্জ - চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি এবং ১৬টি বন স্টেশন।
বনটি আবার ৫৫ কম্পার্টমেন্ট এবং ৯টি ব্লকে বিভক্ত।[১]
১৯৯৩ সালে নতুন করে খুলনা বন সার্কেল গঠন করা হয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য
এবং তাতে একটি সংরক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বনবিভাগের প্রশাসনিক প্রধাণের
পদটি খুলনাকেন্দ্রিক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে বহুসংখ্যক পেশাদার,
অপেশাদার ও সহায়ক জনবল। ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় একক হল কম্পার্টমেন্ট।
চারটি বন রেঞ্জের অধীনে থাকা ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট স্পস্টতই নদী, খাল,
খাঁড়ির মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিভক্ত।
বাংলাদেশে অভয়ারণ্য তিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। এগুলো হলোঃ
১. পূর্বাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ আয়তন প্রায় ৩১,২২৭ হেক্টর। মিঠাপানি ও সুন্দরী গাছের (Heritiera fomes) প্রাধাণ্যের সাথে সাথে গেওয়া (Excoecaria agallocha), পশুর (Xylocarpus mekongensis) ও কেওড়া (Bruguiera gymnorrhiza) রয়েছে বন্যাপ্রবণ এলাকাটি জুড়ে। সিংড়া (Cynometra ramiflora) হয় অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মাটিতে, আমুর (Amoora cucullata) হয় জলপ্রধাণ এলাকায়, গরান (Ceriops decandra) হয় নোনা এলাকায় এবং গোল পাতা (Nypa fruticans) জলধারা বরাবর হয়।
২. দক্ষিণাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ বিস্তৃত ৩৬,৯৭০ হেক্টর এলাকা
জুড়ে। এলাকাটিতে লবণাক্ততার বিশাল মৌসুমী তারতম্যের প্রমাণ রয়েছে।
তুলনামূলকভাবে দীর্ঘকালীন লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকাটির প্রধান বৃক্ষ প্রজাতির
মধ্যে রয়েছে গেওয়া। এটি প্রায়ই সেসব স্থানে জন্মায় যেখানে সুন্দরী অত
সফলভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে না।
৩. পশ্চিমাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ ৭১,৫০২ হেক্টর এলাকা জুড়ে
অবস্থিত। এ এলাকার তুলনামূলকভাবে শুষ্ক ভূমি ও নদীর তীরে গেওয়া, গরান ও
হন্তাল জন্মে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন